মুফতী শিব্বির রহ. জীবনী

জামিয়ার কৃতি শিক্ষার্থী মুফতী শিব্বির রহ.

জন্ম ও বংশ পরিচিতি
কর্মবীর হযরত মাওলানা হাফিজ মুফতী শব্বিীর আহমদ মাহবুর রহ. হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার খাগাউড়া ইউনিয়নের ঘাটুয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মাওলানা আব্দুল হালিম রহ.। ২০ মে ১৯৫২ ইং, ১৩৫৯ বাংলার ৬ ই জৈষ্ঠ ১৩৭১ হিজরী ২৫ শে শাবান রোজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯ টায় তাঁর জন্ম। পিতা মাওলানা আব্দুল হালিম সাহেব রহ. আল্লাহর একজন খাছ বান্দা ও ওলী ছিলেন। তিনি সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত দিরাই থানাধীন কলিরকাপন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাল্যকালেই পিতৃহারা হন। সে কালে তিনি আপন ভাই, বোন ও মাতৃহারা হয়ে একেবারে অসহায় ও ইয়াতীম হয়ে যান। পুরো পরিবারে কেবল তিনি একাই অবশিষ্ট থাকলেন। পৃথিবীতে তাঁর প্রতি দরদী আর কেউ রইল না। তাঁর জীবনের উন্নতি কল্পে তাঁর কোন পথ নির্দেশক থাকলো না। পার্থিব সম্পদ যা লুণ্ঠিত হয়েছিল তা ফিরে পাওয়ার উপায় থাকলো না। তবে মহান আল্লাহই ছিলেন তার একমাত্র সহায়। তার জীবন ছিল উন্নত, যা অন্য কারো জানা ছিল না। এই ইয়াতীম অসহায় একদা নদীর জলে সাঁতার কাটছিলেন। হঠাৎ এই নদী পথেই তাঁর পিতার এক মাওলানা বন্ধু গমন করছিলেন। বন্ধুর ছেলেকে অসহায় অবস্থায় সাঁতার কাটতে দেখে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে অবস্থা জানতে পারেন। পরে তাকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান। এখানে তাঁর মায়াবী ছায়ায় তিনি কুরআন মাজীদ শিক্ষা করেন। মাওলানা সাহেবের কোন সন্তান ছিল না বলে তাঁর নিজের সন্তানের ন্যায় তাকে লালন পালন করতে লাগলেন। কিছু দিন পর মাওলানা সাহেবের একটি সন্তান জন্ম নেয়। আর তার দূর্গতি ও পুনরায় দেখা দিল। আসলে দূর্গতি ছিল না বরং সেটাই ছিল তার সৌভাগ্যের প্রথম ধাপ। এবার তার মনে অন্য রকমের প্রেরণার সঞ্চার হল। এদিকে মাওলানা সাহেবের বাড়িতে শান্তি নেই, অপর দিকে ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের উৎসাহ তার মনে প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছিল। কিন্তু কোথায় কি করে যেতে হবে এ বিষয়ে তাকে পরামর্শ কে দেবে? অপর দিকে তিনি মনে করলেন যে, তাকে যে কোন প্রকারে বানিয়াচং পৌঁছতে হবে। মাওলানা আব্দুল হালিম সাহেবের গ্রামের নাম ছিল সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কালির কাপন নামক গ্রাম। এখান থেকে বানিয়াচংÑএর দূরত্ব ছিল প্রায় ৩০ মাইল। একদা একাকী বানিয়াচং অভিমুখে রওয়ানা করলেন। উদ্দেশ্য বানিয়াচং আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হওয়া। হাওর, বাঁওড়, খাল-বিল পাড়ি দিয়ে বানিয়াচং পৌঁছেন। কিন্তু এখানে কোন সুযোগ করতে না পেরে পুনরায় সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কালির কাপন নামক গ্রামে ফিরে যান। কিন্তু জ্ঞানার্জনের প্রবল আগ্রহ তাঁকে বাড়িতে থাকতে দেয়নি। তাই তিনি এবারও বহু কষ্ট স্বীকার করে পুনরায় বানিয়াচং উপস্থিত হলেন। মহান মালিকের ফযলÑকরমে এবার সুযোগ পেয়ে গেলেন। শিক্ষার সাগরে তিনি এবার অনুগমন করতে পারলেন। অবশেষে ঢাকা আশরাফুল উলূম বড় কাটারায় সুনামের সঙ্গে দাওরায়ে হাদীস অধ্যয়ন করে আবার বানিয়াচং প্রত্যাবর্তন করেন। পরে সেখান থেকে ঘাটুয়া নামক গ্রামে আগমন করলেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
সপ্নযোগে বংশ তালিকার প্রাপ্তি
একদা হযরত মুফতী সাহেব রহ. বলেন, যখন আমি আমার পূর্ব পুরুষের নাম জানার আকাক্সক্ষায় ছিলাম। আর আমার আব্বাজানের কাছ থেকে মুন্সী আলাউদ্দীন, থেকে একদিল শাহ রহ. পর্যন্ত নামগুলো জানতে পারলাম। তখন আমার তৃপ্তির বদলে আকাক্সক্ষা আরো বেড়ে গেল। আর মনে হলো, হায়! যদি পূর্ণ বংশতালিকা জানতে পারতাম। যা দ্বারা আমাদের পূর্বাপর বংশ পরম্পরা জেনে নিতাম। কিন্তু এটা সম্ভব হয় কি করে? কারণ সে অতীতের কোন ইতিহাস যে আমাদের জানা ছিল না। এসব লিখিতভাবে আমাদের পর্যন্ত কেউ পৌঁছায়নি। কিছু দিন পর হঠাৎ করে আমি স্বপ্নে দেখি আমার হাতে একটুকরো কাগজ। এতে আমাদের বংশ তালিকা লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেখানে আমার থেকে নিয়ে ইবরাহীম আ. পর্যন্ত ধারাবাহিক নামসমূহ লিখিত আছে। তখন মনে মনে ভাবলাম যে হয়ত আমরা আওলাদে ইবরাহীম আ.। এতে অসম্ভবের কিছু নেই। যাক মহান আল্লাহই ভাল জানেন। কিন্তু তখন আবার মনে জাগল যে, হায়! যদি কোনভাবে আদিপিতা হযরত আদম আ. পর্যন্ত বংশ তালিকা জানতে পারতাম! হায় যদি মহান আল্লাহ পুনরায় দেখিয়ে দিতেন। এভাবে বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ করে স্বপ্নে দেখতে পেলাম-আমার হাতে একখানি পুরাতন পুস্তিকা রয়েছে। পুস্তিকার সর্বশেষ পৃষ্ঠায় রয়েছে আমাদের বংশ তালিকা। সেখানে আমার থেকে নিয়ে হযরত আদম আ. পর্যন্ত বংশ তালিকা লিখিত আছে। প্রতিটি নামের শেষে তাঁর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ লেখা রয়েছে । কিন্তু পূর্ব পুরুষদের নামসমূহ স্মরণ থাকেনি। তবে কয়েক জনের নাম উল্লেখ করছি যাদের নাম কাগজে লিখা ছিল।

হযরত আদম
আ.ÑশীশÑইউনুসÑকাইনানÑমহলিলÑইয়ার্দÑইদ্রীসÑমাতুশালাখÑলমকÑনূহÑশামÑআরফাখশাদÑসালেহÑআইবরÑকালিসÑরাউÑসরুজÑনাহুরÑতাহির(আযর)ÑইবরাহীমÑইসমাইলÑকাইজারÑআওয়ানÑঔসÑমররহÑসমঈÑরোজাহÑনাজিবÑমুয়াসির-ঈহামÑআফতাদÑপসাÑহাসানÑআনাফÑআরওয়াÑবলখীÑহারীÑইয়াসীনÑহুমরানÑআলরুযাÑউবাইদÑআন্ফÑআসকীÑমাহীÑমাখুরÑফাজিমÑআলেহÑবদলানÑইয়ালদারুমÑহেররাÑনাসিলÑআবিলআওয়ামÑমতাসাবিলÑবরুÑঔসÑসলমানÑহামিসাÑউদূদÑআদনানÑমঈদÑহমলÑনবিতÑসলমানÑহুমিসাÑআলঈসাউÑউদূদÑউদ্ÑআদনানÑমা‘দÑনজরÑমুদারÑইলিয়াসÑমুদরিকাÑখুজাইমÑকিনানÑনযরÑমালিকÑফিহির(কুরাইশ)গালিবÑলুবাইÑকা‘বÑর্মুরাÑকিলাবÑক্সাাইÑআব্দুলমন্নাফÑহাসিমÑআব্দুলমুত্তালিবÑআব্দুল্লাহÑমুহাম্মদÑজয়নাবÑ স¤্রাট বাবর ……………স¤্রাট আকবর …………….হযরত আলাউদ্দিন (আলাই শাহ) রাহ. তাঁর নাম ( ……….) বলে লিখিত পেয়েছি ………..হুছন আলী তাঁর নাম দুটি লিখিত পেয়েছি, তাঁর একটি হুসাইন …………..আমার নাম। (………………..)
-মাহবুর
স্বপ্ন ০২/০২/১৩৯৭ হি
নোট : আল্লামা মুফতী সাহেব রহ. বলেন, আমি মিথ্যা স্বপ্ন লিখিনি। যতটুকু লিখছি তা আমার জানামত একেবারে সত্য, তবে এটাও জ্ঞাতব্য যে, স্বপ্ন শরীয়তের দলীল হতে পারে না। আমার পিতামহ মুন্সী হুসাইন রহ. ও একজন বড় মাপের বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। ইন্তেকালের পর ক্বলবের স্থানটি জীবিত মানুষের ন্যায় গরম ছিল বলে তাঁকে জীবিত না মৃত ধরা হবে এই নিয়ে লোকদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছিল। তার পেশা ছিল লোকদের মাঝে দ্বীনী শিক্ষাদান আর নিজের জীবন চলার জন্য একটি মুদি দোকান ছিল। তিনি সর্বদা বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরে কাটাতেন। তাঁর ইন্তেকালের পর আলেমগণ বলেন, তিনি আল্লাহর বেশি যিকির করতেন, এজন্য তার ক্বলব জিন্দা রয়েছে। পরবর্তীতে এই অবস্থায়ই তাকে দাফন করা হয়। তার পিতা-আযীম আলী, তিনিও তৎকালীন সময়ে একজন সুপ্রসিদ্ধ সম্ভ্রান্ত ও দেশের বিশিষ্ট ধর্মীয় মান্যবর ব্যক্তি হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন এবং তার পিতা দরবারী শাহ্, তার পিতা ছিলেন- একদিল শাহ্।
শৈশব ও কৈশোর
আল্লামা শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ.-এর উন্নত স্বভাব প্রকৃতি ছিল, যা তার শৈশব ও কৈশোরেই বিকশিত হয়ে ছিল। চারিত্রিক উন্নত গুণাবলি এ সময়ই তার মাঝে পরিলক্ষিত হয়। শৈশব ও কৈশোরেই তিনি শরীয়তের কঠোর পাবন্দ ছিলেন। সর্বদা জামা‘আতের সঙ্গে নামায আদায় করতেন। কোন অবস্থাতেই তিনি নামাযের জামাআত তরক করতেন না। শৈশব থেকেই তার স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর যা পড়তেন তা সহজেই ভুলতেন না। পরীক্ষায় সর্বদা প্রথমস্থান লাভ করেছেন। তিনি ক্লাসের সবক শেষ করে পরের দিনের পড়াও মুখস্থ করে ফেলতেন। এভাবে তিনি নিজ উস্তাদগণের নেক নজর কেড়ে নেন। হযরতের লেখা পড়ার সাথী ছিলেন সমবয়সী তার মামা হযরত মাওলানা আব্দুল হামিদ সাহেব । তিনি বলেন আমরা সর্বদা এক সঙ্গে চলা ফেরা পড়াশোনাতে ব্যস্ত থাকতাম। আমাদের মাঝে পড়াশোনায় প্রতিযোগিতা লেগে থাকত। তার খেলাধুলা ছিল অধিকাংশ বিজ্ঞানময়। এমনকি তিনি বিভিন্ন জিনিস দিয়ে গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদি বানাতেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই তীক্ষè বুদ্ধি ও প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন।
শিক্ষা জীবন
হযরত মাওলানা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. আলিম ও বুযুর্গ পরিবারের সন্তান হওয়ায় বাল্যকাল থেকেই দ্বীনী পরিবেশে লালিত পালিত হন। অধিকন্তু, তিনি ছিলেন সে সকল মনীষীদের অন্যতম যারা বাল্যকাল থেকেই মেধা প্রজ্ঞা ও ধী-শক্তির অধিকারী ছিলেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। প্রতিটি মানুষের শৈশবের শিক্ষা-দীক্ষা ও তা’লীম তারবিয়াতের মূল ভিত্তি হচ্ছে তার পরিবার। মুফতী সাহেব রহ. এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আলেম ও বুযুুর্গ পিতা-মাতার তত্ত¡াবধানে এবং দ্বীনী পরিবেশে তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি নিজ গ্রামস্থ ঘাটুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পাশাপাশি পিতা-মাতার যতেœ নিজ বাড়িতে পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মক্তবে পবিত্র কুরআন শিক্ষা শুরু করেন।
এরপর ঘাটুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করে পিতার কর্মস্থল “জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমামবাড়ী টাইটেল মাদরাসায়” পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে তাকে আর স্কুলে রাখা সম্ভব হয়নি। এরপর শুরু হয় তাঁর মাদরাসা শিক্ষার যাত্রা এদিকে হযরত মুফতী সাহেব রহ. বয়সে স্বাভাবিকতার চেয়ে যদিও ছিলেন ছোট কিন্তু পড়া লেখার মাধ্যমে তিনি নিজ উস্তাদগণের মন জয় করে নেন। এরপর এখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে কাফিয়া জামা‘আত পর্যন্ত শেষ করে চট্রগ্রাম দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় গিয়ে ভর্তি হন। এ সময় বৎসর শেষ হওয়ার ক্ষানিক পূর্বে মাদরাসার মধ্যে বিশাল এক রাজনৈতিক গোলযোগ সৃিষ্ট হওয়ায় পুনরায় জামিয়া ইমামবাড়ীতে চলে আসেন এবং এখানেই বছরের বাকি সময় পার করেন। এরপর পবিত্র রমযান মাসে উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্থান চলে যান। অতঃপর পাকিস্তান করাচীর হায়দারাবাদের অর্ন্তভুক্ত টেন্ডুয়ালায়ার শহর সংলগ্ন-দারুল উলূম ইসলামিয়া আশরাফাবাদে ভর্তি হন। এখানে শেষ পর্যন্ত শায়খুল হাদীস আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী, থানভী সাহেবসহ আরও অনেক বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের নিকট হতে ইলমে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর খাস রহমতে বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২০ বৎসর ৫ মাস। এরপর তিনি তাফসীর শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য চলে যান পাঞ্জাবের যুগশ্রেষ্ঠ তাফসীরবিদ আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ. সাহেবের কাছে। এখানে তাফসীর অধ্যায়নকালে আরো বেশ কিছু যুগ শ্রেষ্ঠ বরেণ্য আলেম উলামা হতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে খানপুরে তাফসীর অধ্যায়নকালে বিখ্যাত মুনাজির হযরত মাওলানা মুহাম্মদ লাল হুসাইন আখতার সাহেব রহ. অন্যতম। তিনি লাহর হতে এসে হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ-এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরকে দরস দিতেন। তিনি প্রথমে কাদিয়ানীদের একজন নেতা ছিলেন। মীর্জায়ীরা তাদের মাযহাবকে সংরক্ষণ করার নিমিত্তে তাদের মতালম্বীদের থেকে মনোনয়ন করে তাকে তাদের মাযহাবের ফান্ডের ৫০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ব্যায় করে তাদের মাযহাবের একজন নেতা হিসাবে গড়ে তুলেছিল। তিনি গোটা মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মাযহাবের হাফেজ ছিলেন। সেই হাফেজুল মাযহাব একদা স্বপ্ন দেখিলেন যে, মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে একজন ফেরেস্তা শূকরাকৃতিতে তার গলায় শিকল পরিয়ে দোযখের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হাফিজুল মাযহাব জাগ্রত হয়ে বুঝে ফেললেন যে, মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পথভ্রষ্ঠ মিথ্যুক ছিল। আর তার সব কিছু মিথ্যা ও ভ্রান্ত। তৎক্ষনাতই তিনি মীর্জার মাযহাব হতে তওবা করে মুসলমান হয়ে গেলেন। অতঃপর যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ হযরত আহমদ আলী লাহুরীর নিকট ইসলামের জ্ঞান অর্জন করেন। দ্বীনী ইলমে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে মীর্জাদের বিরুদ্ধে সারা জীবন ব্যায় করে ইসলামের খেদমত করে যান। তিনিই আবুল আলা-মওদুদীকে ইসলামের নামে ভেজাল সৃষ্টিকারী বলে পাক-ভারতে সর্ব প্রথম ঘোষণা করেন। অবশেষে লাঞ্জিত মীর্জা পন্থীরা তাদের মতাবলম্বীদিগকে একথা জানাতে বাধ্য হয় যে, হে মীর্জা পন্থিগণ! তোমরা কখনও লাল হুসাইনের চ্যালেঞ্জ কবুল করতে সাহস করো না। এতে তোমাদের ক্ষতি হবে। পাকিস্তানে মীর্জাদের ফেৎনা থাকার কারণে তিনি কয়েক বছর যাবৎ আল্লামা দরখাস্তী রহ. সাহেবের তাফসীর শিক্ষার্থীদের নিকট মির্জাপন্থীদের বিরুদ্ধে যা রেখে যেতেন তা জমা করে আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. মুনাজারা শিরোনাম দিয়ে কাদিয়ানী মতবাদ প্রসঙ্গে একখানা পুস্তিকা রচনা করেন। অতঃপর মুফতী সাহেব রহ. ইংরেজির উপর বিশেষ জ্ঞান লাভের জন্য করাচি মাদরাসায়ে তালীমুল ইসলাম এ ভর্তি হন। সেখানে ইংরেজির উপর পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. হযরত জাফর আহমদ উসমানী রহ. এর কাছে ইলমী ফেক্বাহর উপর বিশেষত্ব অর্জনের জন্য করাচি আশরাফুল মাদারিসে দারুল ইফতায় ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেখানের শিক্ষকগণ ছিলেন দেশ-বিদেশের সকল আলেমের নিকট সুপরিচিত অভিজ্ঞ। তখন হযরত জাফর আহমদ উসমানী খুশি হয়ে নিজ হাতে আল্লামা হাফেজ মুফতী রশিদ আহমদ লুধিয়ানভীর প্রতি একটি চিঠি লিখেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন যে, আমার এই শিব্বির আহমদকে আপনি বক্তব্য লিখুনিতে গবষেণায় সর্বক্ষেত্রে অনন্য পাবেন ইনশাআল্লাহ। তাকে ইলমে ফিকহের বিশেষ জ্ঞানের জন্য আমি আপনার কাছে প্রেরণ করলাম। হযরত রশিদ আহমদ রহ. তাঁকে সাদরে গ্রহণ করলেন, আলহামদুলিল্লাহ। তিনি হযরত মুফতী সাহেবের জ্ঞান বুদ্ধি দেখে বিমোহিত হন এবং তাকে অন্য ছাত্রদের হতে আলাদা দৃষ্টিতে দেখতেন এবং বেশি মহব্বত করতেন। এর কারণ হচ্ছে হযরত জাফর আহমদ উসমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (রহ.) এর নিকট সেই পত্র প্রেরণ, যাতে লিখা ছিলো আমার এই শিব্বির আহমদ কে বক্তব্য লিখুনিতে সর্বক্ষেত্রে আপনি অনন্য পাবেন ইনশাআল্লাহ। এক দিন লুধিয়ানভী রহ. শিব্বির আহমদ রহ. কে বললেন। হে শিব্বির তোমাকে আমার এই ইফতা ও ব্যক্তিগত কুতুবখানার সমস্ত কিতাব মুতায়ালার জন্য অনুমতি দিয়ে দিলাম। কিন্তু আল বেদায়াতুল মুজতাহিদ নামক গ্রন্থটি তোমার পড়ার অনুমতি নেই। এ প্রসঙ্গে মুফতী সাহেব বলেন, আমি উস্তাদকে প্রশ্ন করলে, উস্তাদ বললেন, আমার আশংকা হয় তুমি এ যুগের মুজতাহিদ হয়ে যাও কিনা। এজন্য সতর্কতা স্বরূপ বিরত রাখা হয়েছে। হযরত মুফতী সাহেব উস্তাদের সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।
যেভাবে হাফিজে কুরআন হলেন
হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. বলেন, যেহেতু বাল্যকালে কুরআন শরীফ হেফজ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি, তাই স্বপ্ন দেখতাম হাফিজ হওয়ার। বাল্যকালে কয়েকবার চেষ্টা করেও কোন সুযোগ হয়নি। অবশেষে আল্লাহর রহমতে আবার এই নেয়ামত লাভের সুযোগ হল। অতঃপর ১৩৯৩হিজরী সনে শাবান মাসে করাচি নাসিরাবাদ মাদরাসায় হাফেজ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের সহকারী ইঞ্জিনিয়ারের খেদমতে হেফজ শুরু করি। কিন্তু ১৩ রমজান,১৩৯৩হিজরী শুক্রবার বেলা ১ঘটিকায় ফেডারেল বি এরিয়াতে সমবেত হওয়ার জন্য পাকস্তিান সরকার ঘোষণা করেন। সেখান থেকে সকল বাংলাদেশীকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে জানতে পেরে নাসিরাবাদ থেকে নিজ দেশে আসতে বাধ্য হলাম। তখন আমার উস্তাদ জনাব হাফেজ সাহেব কিছু টাকা পয়সাও দিলেন। আমার সহপাঠী উস্তাদ সাহেবের ছেলে থেকে এক টুকরো কাগজ ও একটা ক্ষুদ্র জিনিস স্মরণিকা হিসাবে নিয়ে উস্তাদ সাহেব থেকে বিদায় নিলাম। যেহেতু আমার হেফজ এখনো শেষ হয়নি, তাই বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না, মোট ১৫দিন বাড়িতে অবস্থান করে ৭ শাওয়াল ১৩৯৩ হিজরী সিলেট কাসিমুল উলুম দরগাহ হযরত শাহ জালাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মাদরাসায় ভর্তি হলাম। খোদার ফজলে রীতিমতোই কাজ চলতে লাগল, করুণাময়ের কৃপাতে আমার মতো এক নগণ্য দাসকে সেই কোরআন শরীফ মুখস্থ করার তাওফিক দিয়ে কৃতকার্য করেছেন। তিনি নিজ খাস রহমতে আমাকে মোট ৯৭ দিনের মধ্যে এই মহান হেফজের সুযোগ (নেয়ামত) দান করেছেন।

কর্মজীবন
শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পরে হযরত মুফতী সাহেব রহ. কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কর্মজীবনের এক পর্যায়ে তিনি প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুনাœতের উপর আমল করার উদ্দেশ্যে ব্যবসা ও সমাজ সেবার জন্য বায়োকেমিক ডাক্তারি কোর্স শিক্ষা গ্রহণ করেন। সাথে সাথে টেপ রেডিও ইত্যাদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি যেখানে মাদরাসার খেদমত করেছেন সেখানে এসব জারী রেখেছিলেন। অবশ্যই জীবনের শেষের প্রায় ২০ বছর সময়টুকু আর এভাবে কাটাতে পারেননি বরং লাগাতার ২৪ঘন্টা শুধু দরস তাদরিসের কাজে ব্যয় করেন।

শিক্ষকতা
১৩৯৪ হিজরী ১৩ই শাওয়াল রোজ বুধবার সিলেট মৌলভীবাজার দারুল উলুম মাদরাসায় হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ রহ. শিক্ষকতা শুরু করেন। উক্ত মাদরাসায় যিনি নিয়োগ দিলেন তিনি হচ্ছেন হযরত মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সাহেব তিনি হযরত মাদানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির মাজাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। উক্ত মাদরাসার মুহতামিম থাকা অবস্থায় একবার সিলেট কাসিমুল উলুম দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদরাসাতে যান। তখন হযরত মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে সালাম-কালাম হয়। তখন তিনি মাত্র হিফজুল কোরআন শেষ করেন। হযরত মুফতি সাহেবকে দেখামাত্রই হযরত মুহতামিম সাহেব আনন্দিত হন। অল্প কয়েকদিন পরই হযরত মুহতামিম সাহেব দারুল উলুম মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন। তখন এই অনুরোধে সুনামের সাথে শিক্ষকতা শুরু করেন।

বিবাহ ও সন্তান-সন্ততি
হযরত মুফতি সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বানিয়াচং থানাধীন ১০নং সুবিদপুর ইউপি বলাকীপুর নিবাসী মোঃ ইসহাক আলী তালুকদারের প্রথম কণ্যা মোসাম্মাৎ তাহেরা খাতুনের সাথে ২০০ টাকা নগদ মহরের বিনিময়ে বিগত ১৪/০৪/১৩৮৫ বাংলা রোজ সোমবার বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ স্ত্রীর গর্ভে ৫জন কন্যা ও ৩ জন পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।

কন্যাগণ
১. ঝীনতা আকতার ২. জিবা খাতুন ৩. আলেমা জুফরা খাতুন জিরক ৪. আলেমা জুফা খাতুন ৫. আলেমা জুলফা খাতুন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী। হযরত মুফতী সাহেব রহ. সকল ছেলেমেয়েদেরকে আলেম বানিয়েছেন। এবং তার একমাত্র ইচ্ছা ছিল সকল মেয়েদের জন্য আলেম জামাতা দেখে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিবাহ দিবেন। ফলে তাই হয়েছে। হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর জীবদ্দশায় তিনি তিনজন মেয়েকে বিবাহ দিতে পেরেছেন। প্রথম মেয়ে ঝীনতা আক্তার সে ছোটবেলায়ই মারা যায়। দ্বিতীয় মেেেয় জীবা খাতুন, বানিয়াচং আদর্শ বাজার তকবজ খানি মহল্লায় মাওলানা আবদুল মতিন সাহেবের কাছে বিবাহ দেন। তিনি বানিয়াচং দারুল কুরআন মাদরাসায় র্দীঘ সাত বৎসর শিক্ষকতা করে বর্তমানে বানিয়াচং বড় বাজার সংলগ্ন চতুরঙ্গ রায়েরপাড়া দারুল হিকমাহ তালিমুল কুরআন একাডেমী পরিচালনা করেছেন। তৃতীয় মেেেয় আলেমা জুফরা খাতুন জীরক, নবীগঞ্জ থানার ছোট আলীপুর গ্রামের মাওলানা মুফতী মোস্তাক আহমদ ফুরকানীর সাথে বিবাহ হয়। তিনি সিলেট জামিয়া হালিমাতুস সাদিয়া রাযি. মহিলা মাদরাসা বালুরচরের মুহতামিম হিসেবে দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন। চতুর্থ মেয়ে আলেমা জুফা খাতুনের বিবাহ আজমিরিগঞ্জ থানাধীন জলসুখা গ্রামের মাওলানা রায়হান উদ্দিন সাহেবের সাথে হয়। তিনি ঢাকার, পূর্ব মাদানীনগর নেদাউল কুরাআন মদরাসায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন। পঞ্চম মেয়ে আলেমা জুলফা খাতুন হবিগঞ্জ সদর পশ্চিম ভাদৈ গ্রামের মাওলানা খলিলুর রহমানের সাথে বিবাহ হয়। তিনি দারুল উলুম হবিগঞ্জ মাদরাসার নাজেমে তা’লীমাত এর দায়িত্ব পালন করে দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন। জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছে এই বিবাহটি হযরত মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ইন্তেকালের প্রায় চার মাস পর, হযরতের বড় ছেলে ডাক্তার মুফতী শাহ জুলকারনাইন সম্পন্ন করেন। এবং এই বিবাহের খরচ হিসেবে হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) বড় ছেলের হাতে নগদ ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ওসিয়ত করে যান। যেন এই টাকা গুলোকে জুলফার বিবাহের কাজে লাগানো হয়। এবং পাত্র যেন আল্লাহ ওয়ালা হন, বাস্তবতায় এমনই পরিণত হলো হযরত মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহির স্বপ্ন আল্লাহর রহমতে পরিপূর্ণ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

পুত্রগণ
১. ডাক্তার মুফতী শাহ জুলকারনাইন তিনি ১৭ ই আগস্ট ২০১৩ ইংরেজি ৯ শাওয়াল ১৪৩৩ হিজরী, রোজ শনিবার, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানাধীন ইমদাদুল উলুম ফয়জিয়া মাদরাসার ছোট বিনাইরচরের নাজেমে তালিমাতের দায়িত্বে জীবনের প্রথম মাদরাসা শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে একাধারে দুই বৎসর শিক্ষকতার করেন। অতঃপর হযরত মুফতী সাহেব রহ. নিজে সারা জীবন বিদেশ বাড়িতে দ্বীনের খেদমতে থাকেন। ফলে নিজের বিভিন্ন কাজে উপস্থিত হতে সক্ষম হয়নি। বাড়িতে বসবাসকারী বাকি পরিবারের কষ্টের কথা মনে করে বড় ছেলে- ডাক্তার মুফতী শাহ জুলকারনাইনকে নিজ শহরে গিয়ে দ্বীনের খেদমত করার ও বাড়ি ঘরের দেখাশোনার জন্য নির্দেশ দেন। এবং এই নির্দেশ দিলেন, বাবা তুমি নিজের জীবন চালানোর জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করবে আর দ্বীনের খেদমতের জন্য মসজিদ মাদরাসায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। আর এই দ্বীনের কাজের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়ার চেষ্টা করবে না। যদিও নিতে হয় তাহলে যেসব হাদিয়া হালাল ভাবে আসবে তা গ্রহণ করবে কখনো দুর্বল টাকার প্রতি লোভ করবে না। প্রশ্ন করা হলো দুর্বল টাকাগুলো কী ? সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বললেন । জীবনের বাঁকে বাঁকে বহু পয়সা আসবে হালাল-হারাম পার্থক্য তোমার এলেম দ্বারাই করতে হবে। সেই দুর্বল টাকা হচ্ছে বিভিন্ন ওজিফা ও কোরআন তেলাওয়াত করে পারিশ্রমিক নেওয়া। যেগুলো হানাফী মাযহাব মতে জায়েজ নয়। আমিও মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি টেপ রেকর্ডার ঘড়ি ইত্যাদি মেরামত ও চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। কুরআন খতমের পরে আমি টাকা অথবা অবৈধপথে বা নাজায়েয পন্থায় কোন টাকা নিজেও অর্জন করিনি আল্লাহর রহমতে আমি আমার সন্তানদেরকেও খাওয়াইনি। বড় ছেলে ডাক্তার মুফতী শাহ জুলকারনাইন নিজ শহর হবিগঞ্জে এসে শহরের শায়েস্তানগর মাছুলিয়া হবিগঞ্জ ডায়াবেটিস এন্ড জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন মাছুলিয়ায়, তাহেরা ফার্মেসী, নামক একটি ওষুধের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। তাহেরা ফার্মেসী নামটি ছেলের মায়ের নামের স্মরণে মুফতী সাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রেখে দিলেন। তখন ব্যবসার মূলধন ছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা মাত্র, যা মুফতী সাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নিজস্ব ইনকামের টাকা। এই ব্যবসাকে বড় ধরনের করার ইচ্ছা ছিল হযরত মুফতী সাহেবের, কিন্তু আফসোস তিনি মাত্র চার মাস পর ইন্তেকাল করেন। এই ব্যবসাকে মজবুত করে ধরে রাখেন বড় ছেলে ডাক্তার মুফতী শাহ্ জুলকার নাইন। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জের চৌধুরী বাজার, নাতিরাবাদ তাহেরা ফার্মেসীর ডাক্তার ও জামিয়া ফাতেমাতুয যাহরা মহিলা মাদরাসা হবিগঞ্জের মুহাদ্দিস এবং ইকরা বাংলাদেশ স্কুল হবিগঞ্জের সিনিয়র শিক্ষক। পাশাপাশি শায়েস্তানগর দারুল কুরআন মাদরাসার নাজিমে তালিমাতের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২. হাফজে শাহ্ জুন্নুরাইন তিনি শিশুকালেই বাবার কাছ থেকে ঢাকা তাহযীবুল ইসলাম মাদরাসায় হিফজ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি মিশকাতে জামিয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসায় অধ্যায়নরত। জুন্নুরাইনের লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন তার বড় ভাই ডাক্তার মুফতী শাহ্ জুলকারনাইন। বড় ভাইয়ের ইচ্ছা বাবার মত ইসলামের সর্বোচ্চ লেখাপড়া করাবেন। আল্লাহ যেন তার নেক আশা পরিপূূর্ণ করেন। ৩.মুহা. জুলকফিল জন্মগ্রহণ করার অল্প কিছুক্ষণ পরই মারা যায়। হযরত মুফতী সাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন আমার আম্মা, আব্বা এবং শাশুড়ির ইন্তেকালে পর এই তিন বৎসরের ভিতরে খোদার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন প্রিয়তমা স্ত্রী তাহেরা খাতুনও। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৩৮বছর স্ত্রী তাহেরা খাতুনের গর্ভে ৮ই ভাদ্র ১৪০৭ বাংলা বুধবার দিবাগত রাত্রে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। প্রসূতি স্ত্রী উপস্থিত সময়ে সুস্থ থাকলেও ক্ষণিকের মধ্যেই প্রচুর রক্তক্ষরণের পর রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন । হযরত মুফতী সাহেব রহ. বলেন, আমি তখন টঙ্গী শহরে অবস্থান করেছিলাম। রাত প্রায় ১১টা ৩০,মিনিটে হঠাৎ টেলিফোনে এই সংবাদ। পরদিন বাড়ি পথে রওয়ানা করলাম। দুপুর ১ টার দিকে বাড়িতে পৌঁছে স্ত্রীর জানাজা ও কাফন দাফন নিজ হাতে সম্পন্ন করলাম।

সন্তানদের লক্ষ করে
প্রত্যেক প্রাণীই মরণশীল। মৃত্যু কখন এসে উপস্থিত হয় তা জানা নেই।
তাই পরবর্তী সন্তান দিগকে লক্ষ্য করে বলেন,
অন্তকালের ক্ষণে ক্ষণে অতীত যখন আসবে মনে,
তখন যদি আমার কথা নাইবা মনে রয়,
লিখুনি খানি দেবে যে মোর নতুন পরিচয়।
আমি হব কবরবাসী, তোমরা তখন নগরবাসী,
সার্থক আমার জীবন হবে এমন যদি হয়,
সন্তান আমার কবর পাশে খোদার কাছে কয়।
কবর পাশে ছালাম দিলে শুনবো আমি খুশি মনে,
আসবে জবাব কবর ফোড়ে ঈমান যদি রয়,
শুনতে পারে সালাম দাতা অলি যদি হয় ।
প্রথম বায়আত
১৩৯৩ হিজরীর ১৮জুমাদালউলা রোজ বুধবার দিবাগত মাগরিব পর পাকিস্তানের করাচিতে নিজ মহামান্য উস্তাদ শাইখুল হাদিস আল্লামা হাফেজ মুফতী রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (রহ.) সাহেবের হাতে চার তরিকার বাইয়াত গ্রহণ করেন। বাইয়াতের আগে এক সপ্তাহ পর্যন্ত এ বিষয়ে ইস্তেখারা করতে বলেছেন তাকে, আদেশ পালনের পর স্বপ্নে দেখেন যে, আমি যেন কোথা থেকে বাড়ি অভিমুখে যাচ্ছি। বাড়ির সংলগ্ন খালভরা পানি পার হবার জন্য অনেক নৌকাও রয়েছে। আমি ঐসবের কোনো একটিতে আরোহণ করলাম। খানিক পরেই উক্ত নৌকা পরিবর্তন করে অন্য া একখানা তে চলে গেলাম। এবং আমাকে খুব সাদা বর্ণের পোশাক পরানো হয়েছে। والله أعلم بالصواب
দ্বিতীয় বায়াআত গ্রহণ
এতদিন যাবৎ যেহেতু কেবল অপেক্ষাই করছিলাম যে, হয়ত পাকিস্থানের সহিত বাংলাদেশের সুসম্পর্ক স্থাপন হবে। আর আমার পীর সাহেবের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপনের একটা উপায় হয়ে যাবে। কিন্তু নিরাশ হয়ে কেবল ভাবছিলাম। অবশেষে শেখ আঃ মন্নান সাহেব গুণই নিবাসীর প্রতি ইচ্ছা করলাম। যেন তার নিকট হতে আতœশুদ্ধি করতে পারি। কারণ আমার সেই পাকিস্তানী মুর্শীদ ছিলেন- চিশতীয়া তারীকার শেখ। কিন্তু গুণই শায়খের নিকট যাবার ইচ্ছা করেও সফল হইনি। ইত্যবসরে হঠাৎ খোদা তায়ালার আপার কারুনায় আমাকে স্বপ্নে দেখানো হল যে, আমি মুজাদ্দেদিয়া তরীকার ছালেক। অনবরত দুইরাত্রে এই প্রকারের স্বপ্ন দেখে পরে মুজাদ্দেদিয়া তরীকার একজন শায়খের নিকট বায়আত গ্রহণ করলাম। এবার আমার তরবীয়ত চলছে। অবশেষে খেলাফত অর্জন করলাম।
নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরীকা অনুযায়ী হযরতের পীর সাহেবের শাজারা নি¤েœ প্রদত্ত হলো।
০১. সায়্যেদুনা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা (সা.)।
০২. হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রা.)।
০৩. ছালমান ফারসী (রা.)
০৪. ইমাম ক্বাছিম ইবনে মুহাম্মদ (রা.)।
০৫. জাফর সাদিক (রা.)।
০৬. মুসা কাজেম (রা.)।
০৭. ইমাম আলী রেজা (রা.)।
০৮. শায়খ মারুফ করখী (রা.)। আবু বকর শিবলী রাহ.
০৯. আবুল হাসান ছিররী সকতী (রা.)।
১০. সাইয়্যেদু ত্বায়েফা জুনাইদ বাগদাদী (রা.)।
১১. আবু বকর শিবলী রাহ.
১২. আবুল কাছিম নাসিরাবাদী (রা.)।
১৩. আবু আলী দাক্কাক (রা.)।
১৪. খাজা আবু আলী ফারমাদী (র.)।
১৫. খাজা ইউছুফ হামদানী (র.)।
১৬. আঃ খালিক গিজদেওয়ানী (রা.)।
১৭. মাওলানা আরিফ রেগওয়ানী (রা.)।
১৮. খাজা মাহমুদ আবুল খায়ের ফগেনভী (রা.)।
১৯. আলী রাখমতনী (রা.)।
২০. মুহাম্মদ বাবা সাক্ষাছি (রা.)। (২৭)
২১. সৈয়দ আমীর কেলাল (রা.)।
২২. খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দী (রা.)।
২৩. হযরত মাওলানা ইয়াকুব চারখি (রা.)।
২৪. উবায়দুল্লাহ আহরার (রা.)।
২৫. মাওলানা যাহিদ (রা.)।
২৬. দরবেশ মোহাম্মদ (রা.)।
২৭. খাজা আমকাঈীঁ (রা.)।
২৮. খাজা বাক্বী বিল্লাহ (রা.)।
২৯. খাজা ইমাম রব্বানী মুজাদ্দেদে আলফেসানী (রা.) সিরহিন্দী।
৩০. খাজা সৈয়দ আদম বান্নুরী (রা.)।
৩১. খাজা আব্দুল্লাহ আকবরাবাদী (রা.)।
৩২. খাজা মাওলানা শাহ আঃ রমীম (রা.)।
৩৩. খাজা ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রা.)।
৩৪. খাজা আঃ আজীজ (রা.)।
৩৫. খাজা সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (রা.)।
৩৬. খাজা শাহ সূফী নূও মুহাম্মদ নেজামপুরী (রা.)।
৩৭. খাজা মাওলানা শাহ সূফী কুতুবে আক্বতাব ফতেহআলী (রা.)।
৩৮. খাজা মুজাদ্দেদে জামান আবুবকর সিদ্দিক (রা.)।
৩৯. খাজা আঃ জাব্বার ছিদ্দীকী (রা.)।
৪০. খাজা সৈয়দ আঃ কদ্দুছ দরকাপনী- ( মৌলবী বাজার -সিলেট )।
৪১. শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফেজ মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ.
হযরত মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পীর সৈয়দ আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের বংশ পরচিয়।
১.হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
২.হযরত বিবি ফাতেমা রািযআল্লাহু তা’আলা আনহা
৩. হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু
৪. হযরত জয়নুল আবেদিন রাযিআল্লাহু আনহু
৫.হযরত মুহাম্মাদ বাকার রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৬. হযরত মুহাম্মাদ জাফর সাদিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৭.হযরত মুসা কাজিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৮.হযরত আব্দুল হামিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৯. হযরত সৈয়দ সুলেমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১০.হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ বাঁকার রহমাতুল্লাহি
১১. হযরত সৈয়দ আব্দুল হাফিজ
১২.হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ হুসাইন রহমাতুল্লাহি
১৩.হযরত সৈয়দ আব্দুস সুবহান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৪.হযরত হযরত সৈয়দ হারুন
১৫.হযরত সৈয়দ সোলেমান কামাল
১৬.হযরত সৈয়দ জালাল রহমতউল্লাহ
১৭.সৈয়দ মর্তুজা
১৮. সৈয়দ আব্দুল হাসিম
১৯. সৈয়দ ইমাম
২০. সৈয়দ সুলেমান
২১. সৈয়দ আলী
২২. সৈয়দ ইশা
২৩. সৈয়দ মুসা
২৪. হযরত সৈয়দ ইব্রাহিম
২৫. সৈয়দ সুলতান
২৬. সৈয়দ শাহ মোস্তফা শেরেছায়ার রাহমাতুউল্লাহ
২৭. সৈয়দ শাহ নছর উল্লাহ
২৮. হযরত সৈয়দ তিতা
২৯. হযরত সৈয়দ মিয়া
৩০. হযরত সৈয়দ হাসান
৩১. হযরত সৈয়দ মোহয়ি (সমাই ঠাকুর)
৩২. হযরত সৈয়দ নাসির রহমাতুল্লাহ
৩৩. হযরত সৈয়দ খিজির
৩৪. হযরত সৈয়দ দানী
৩৫. হযরত সৈয়দ সামি রহ.
৩৬. হযরত সৈয়দ আনু
৩৭. হযরত সৈয়দ শরীয়ত উল্লাহ
৩৮. হযরত সৈয়দ আরজান আলী
৩৯. হযরত সৈয়দ মৌলানা আব্দুল ওয়াহাব রহ.
৪০. হযরত সৈয়দ আব্দুস সালাম
৪১.হযরত সৈয়দ মৌলভী আব্দুল কুদ্দুস মুজাদ্দেদী আল কাদরী ওয়াল চিশতী ওরফে ছালিক মিয়া রহ. ধরকাপনী, মৌলভীবাজার।
হযরতের প্রসিদ্ধ ওস্তদাগণর কয়েকজন
১.হযরত মাওলানা আব্দুল হালিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি ঢাকা জামিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসার আল্লামা আব্দুল ওয়াহাব পীরজী হুজুর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাগরেদ। তিনি হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমামবাড়ী টাইটেল মাদ্রাসায় একটানা ৪৫ বছর সুনামের সাথে শিক্ষকতা ও মাদরাসার নাজিমে কুতুবখানার দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি ইমামবাড়ী বাজার মাদরাসা মার্কেটে হুসাইনিয়া কুতুবখানা নামে একটি লাইব্রেরীর ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি ফারসি ভাষার বিশেষ পাÐিত্ব অর্জন করেন। এ কারণে হযরতকে অনেকেই ফার্র্সি হুজুর হিসেবে জানত। তিনি হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহির সম্মানিত পিতা। তাই ফারসি ভাষার বিশেষ জ্ঞান স্বীয় পিতার নিকট হতেই বিশেষ পাÐিত্ব অর্জন করেন।
২. ইলাউস সুনান ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা শায়খুল হাদিস আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির আপন ভাগিনা ছিলেন। তিনি করাচি হায়দারাবাদ অর্ন্তভুক্ত দারুল উলুম ইসলামিয়া আশরাফাবাদ এর শাইখুল হাদিস ছিলেন। সেখানে ১৩৭৮ সালে তার কাছে মুফতী শিব্বির আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ বুখারী শরীফ অধ্যায়ন করেন। হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির মেধা বুদ্ধি দেখে আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী রহ. বিমোহিত হন। তিনি হযরত মুফতী সাহেবের বার্ষিক পরীক্ষার বুখারী পেপার দেখে মুগ্ধ হন এবং ১০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নাম্বার দিয়ে পরবর্তী পৃষ্ঠাতে মাশাআল্লাহ আরবিতে লিখে দিলেন। এবং হযরত ওসমানী রহ. ছাত্রদেরকে বলেন। আমি জীবনে যত ছাত্র পেয়েছি তার মধ্য হতে তিনজন ছাত্র পেয়েছি সর্বোচ্চ মেধাবী যা আমাকে তাদের প্রশংসা করতে নিজ আবেগ বাধ্য করেছে। তার মধ্যে হতে সর্বশেষ তৃতীয় ব্যক্তি হলো এই শিব্বির আহমদ। অতঃপর হযরত ওসমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুফতী শিব্বির আহমদ কে তাখাসসুস ফিল ফিকহ অর্জনের জন্য প্ররেণ করেন ফকিহুল আসর আল্লামা মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ. এর নিকট। প্রেরেণের সময় সাথে একটি পত্র লিখলেন ওসমানী রহ., যে আমার এই শিব্বির আহমদ কে আপনি বক্তব্য লিখনী সাহিত্যে গবেষণায় সর্বক্ষেত্রে যোগ্য মনে হবে ইনশাআল্লাহ। এজন্য আমি আপনার কাছে ইলমে ফেকাহ অর্জনের জন্য তাকে প্রেরণ করলাম।
৩.ফকিহুল আসর শায়খুল হাদিস ওয়াল ফিকহ আল্লামা মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ., আহসানুল ফাতাওয়া গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি পাকিস্তান দারুল উলুম করাচির দির্ঘদিন শায়খুল হাদীস হিসেবে ছিলেন। পরবর্তীতে ১৩৮৩ হিজরী, করাচির নাজেমাবাদ আশরাফুল মাদারিস নামে একটি দীনি গবেষণাগার হিসেবে মাদ্রাসা ও দাওয়াতি কেন্দ্র প্িরতষ্ঠা করেন। তিনি আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুব রহ.-এর ফিকহের প্রধান ওস্তাদ। হযরত মুফতী লুধিয়ানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুফতী শিব্বির আহমদ এর মেধায় মুগ্ধ হয়ে এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। শিব্বির আহমদ আহমদ কুতুব খানার সমস্ত কিতাব মুতাআলার জন্য তোমাকে অনুমতি দিয়েছে কিন্তু, আল বিদায়াতুল মুজতাহিদ, নামক গ্রন্থটি পড়ার জন্য তোমার অনুমতি নেই। এর কারণ আমি আশঙ্কা করছি তুমি মুজতাহিদ হয়ে যাও কিনা। একমাত্র তোমার জন্য আমার এই ইফতা ক্লাস দ্বিতীয় বৎসর পড়ার জন্য উন্মুক্ত রইলো হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ রহ. বলেন আমরা যে সকল তামরীন মাসআলা বের করেছিলাম সেই সব মাসআলাকে একত্রিত করে আহসানুল ফাতাওয়া হুজুর বের করেন। এর মধ্যে আমার প্রায় ২৮৫ টি তামরীন মাসআলা রয়েছে যা হুজুরের সত্যায়িত আলহামদুলিল্লাহ।
৪. বিশ্ব বিখ্যাত হাফিজুল কোরআন ওয়াল হাদিস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পাঞ্জাবের খানপুর আধ্যাত্মিক ও তাফসীরের জন্য বিশেষ মারকাজ তৈরি করেন। সেখানে ১৩৭৯ সালের শেষ দিকে আল্লামা মুফতি শিব্বির আহমদ মাহবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কাছে তাফসীর অধ্যায়ন করেন ও আধ্যাত্মিক বিশেষ আমল ও শিক্ষা গ্রহণ করেন।
৫. হযরত মাওলানা মোঃ লাল হোসাইন আখতার সাহেব রহ., তিনি ছিলেন প্রথমে মির্জা কাদিয়ানীদের মাযহাবের ইমাম । পরবর্তীতে তিনি যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা আহমদ আলী লাহুরী রহ. এর হাতে মুসলমান হন । এবং মুসলমান হওয়ার পর ইসলামের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি লাহোর হতে প্রতি বৎসর খানপুর পাঞ্জাবে আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তি রহ. এর দরসের ছাত্রদেরকে আকাইদ ও কাদিয়ানী ধর্মমত প্রসঙ্গে ক্লাস করতেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সারা পৃথিবীতে কাদিয়ানীদের কাফের তা প্রমাণসহ পৌঁছে দেওয়া। সেখানে আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. তার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। এবং এই কাদিয়ানী প্রসঙ্গে একটি পুস্তিকাও রচনা করেন। ে
৭. শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল মুমিন দামাত বারাকাতুহুম তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সম্মানিত সভাপতি ও শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির সুযোগ্য খলিফা। হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ., জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় বিভিন্ন কিতাব হযরত এর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। জীবনের শেষ প্রান্তে ১৯৯৯ ইং, আল্লামা আব্দুল মোমিন দামাত বারাকাতুহুম যখন মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন। তখন হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ রহ. কে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার জন্য জোর দাবি করেন । তাই হুজুরের কথা রক্ষার্থে কিছুদিনের জন্য উক্ত মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ হন। হযরতের উদ্দেশ্য হল যেন আদরের প্রিয় ছাত্র মুফতী সাহেব সর্বদা নিজের কাছে শিক্ষক হিসেবে থাকেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হযরত মুফতী সাহেব রহ. যুগের আবর্তে প্রয়োজনের তাগিদে সুদূর ঢাকা জীবনের বেশিরভাগ সময় দিনের কাজে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হন। কারণ তিনি আর্থিক অনটনে থাকার কারণে দূরে যেতে বাধ্য হন। এদিকে হযরত শায়েখ হযরত মুফতী সাহেবকে নিয়ে খুবই গর্ব করতেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত শায়খ সাহেব দামাত বারকোতুহুম কে সুস্থতা ও নেক হায়াত দান করুন। আমীন।
৭. ক্বারী হাফেজ মাওলানা শরীয়ত উল্লাহ সাহেব রহ. যিনি হযরত মাওলানা ক্বারী আব্দুর রহমান মক্কী রহ. ও তদীয় সাগরেদ ক্বারী আব্দুস সামাদ সাহেবের সুযোগ্য ছাত্র হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. ঢাকা মিরপুর ৬, জামিয়া দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষকতার ফাঁকে ফাঁকে ক্বারী শরীয়ত উল্লাহ সাহেবের বাসায় গিয়ে, ক্বেরাতে সাবাআ আশারা পূর্ণাঙ্গভাবে হাসিল করেন।
রচনা
লেখালেখি ও রচনা হচ্ছে তার উজ্জ্বল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই প্রমাণ করে যে তিনি একজন বিচক্ষণ ও ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন। দাওয়াতের পথ ও পন্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত একজন দায়ী ও সাহিত্যিক ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। জীবনের শুরুতেই তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় অনর্গল কবিতা আবৃত্তি করতেন। এভাবে তিনি একের পর একটি করে বাংলা, উর্দু, আরবি, ফারসি, হিন্দি, ইংরেজি ভাষার উপর গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। এবং পরবর্তীতে প্রত্যেক ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিন্ন ভিন্ন পুস্তিকা রচনা করেন। যেমন, ১. কাদিয়ানী ষড়যন্ত্র ও তৎপ্রসঙ্গ বাংলা। ২. তরজমাতুল কোরআন উর্দু। ৩. দেওয়ানুল মুতানাব্বী উর্দু। ৪. খোলাছাতুল হিসাব উর্দু গণিতশাস্ত্র। ৫. বিজ্ঞানময় কোরআন ও হাদিস বাংলা। ৬. ইসলামের দৃষ্টিতে কোপারনিকাসের সৌর বিজ্ঞান বাংলা। ৭. বায়োকেমিক রেপার্টরি বাংলা নোটবুক। ৮. কাশফুল খন্ড সকল ভাষা মিশ্রিত ৩৩৬১ পৃষ্ঠা। ৯. আল মুখতাসার আলাল মুখতাসার উর্দু। ১০. শরহুল মাওয়াকিত ওয়াল মাওয়াজিন ওয়াল মাওয়াতিন, এই গ্রন্থটি হযরত মুফতী সাহেব রহ. জীবদ্দশায় বিভিন্ন মাদরাসায় ইফতা জামাতে সিলেবাস হিসাবে ক্লাস হতো। তিনি নিজে পড়াতেন। কিতাবটি ১০০ নাম্বারের পরীক্ষা হয়। এটি বেফাক বোর্ড ইফতা ক্লাসের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গ্রহণ করে । পরে কিতাবটির স্বত্বাধিকারী মুফতী সাহেব রহ. এটি বেফাক বোর্ডকে চিরদিনের জন্য ওয়াকফ করে দেন। বর্তমানে এটি বেফাক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলা। ১১। দুরুসুল ফুনুন ৫ খন্ড পৃষ্ঠা প্রায় ১১৬০ উর্দু, আরবি। ১২. বুখারী শরীফের প্রথম খন্ড আংশিক নোট বাংলা। ১৩. মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড আংশিক নোট বাংলা,। ১৪. হিদায়া আউয়াল আংশিক নোট উর্দু। ১৫. জামউত তাফাসীর উর্দু ৪০৪ পৃষ্ঠা, লেখা চলতি অবস্থায় হযরত ইন্তেকাল করেন। ১৬. ইলমুল লুগাত ৬ ভাষায় বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি, আরবি, হিন্দি। ১৭. তারিফুল ফোনুন উর্দু ২ খন্ড ৫৬০ পৃষ্ঠা। ১৯. প্রাথমিক ঈমান ও নামাজ শিক্ষা। ২০. মাসায়েল শিক্ষা, র্উদু। ২১. কোরআনী কায়দা, বাংলা। ২২ তারিফুল মুসান্নিফিন, উর্দু। ২৩. দোয়া শিক্ষা, বাংলা। ২৪. সৌরজগত প্রসঙ্গে।

ইমাম ও খতীব এর দায়িত্ব
জীবনে সর্বপ্রথম ১৯৮৫ ইংরেজির ৮ নভেম্বর হযরত হাফেজ মাওলানা মুফতী শিব্বির আহমদ রহ. মাদরাসার শিক্ষকতার পাশাপাশি ইমাম ও খতিব এর দায়িত্ব নেন। জামে মসজিদ দারুল উলুম বøক ডি মিরপুর ৬, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ, অতঃপর সেখানে বৎসর যেতে না যেতেই হযরত মুফতী সাহেব রহ. মনে অশান্তি ভোগ করছিলেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন যখন আপনি কোন দায়িত্ব পালনে নিয়োগ হবেন। তখন তার দায়িত্ব পালনে যদি কোন সন্তুষ্টি অর্জনে দুর্বলতা দেখা দেয়। তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে উক্ত অবস্থা হতে নিজেকে ফিরে নিবেন। আর আমার এই মসজিদের দায়িত্ব ছাড়ার কারণ হলো, প্রায় সময়ই কোন না কোন মুসল্লির দোয়া কুরআন খতম ইত্যাদি বিভিন্ন সময় উপস্থিত হতো আর মুয়াজ্জিন তা কামনাও করতেন। এবং এই সমস্ত খতম পড়ে তার বিনিময় টাকা নেওয়া বৈধ নয়। যখন আমি এগুলোকে বিনা পয়সায় পড়ে খতম আদায় করতাম । তখন মুসল্লিগণ তার বিনিময় হাদিয়া দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতো। নিজেও নিতে পারি না আবার না নিলে মুসল্লিগণ অসন্তুষ্ট হত। এসব কারণে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এসব দায়িত্ব হতে অব্যাহতি নিই।

সর্বপ্রথম চাকরি
হযরত হাফেজ মুফতী শিব্বির আহমদ রহ. বলেন, ১৩৭৮ সালে যখন আমি উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তান যাই। তখন হাতে ৩৫০ টাকা নিয়ে রওনা করলাম। আব্বু সাহেব দিলেন ২০০ এবং অপর একজন হতে ১০০ এবং নিজের নাস্তা টাকা হতে জমানো ৫০ মোট ৩৫০ টাকা নিয়ে ঢাকা পৌঁছি। ঢাকায় দুই দিন অবস্থান করে আকাশ পথে বিমানে করাচি পৌঁছলাম। পরে হায়দারাবাদের টেন্ডুওয়ালায়ার শহর সংলগ্ন দারুল উলুম ইসলামিয়া আশরাফাবাদে ভর্তি হই। খোদার ফজলে রীতিমতো পড়াশোনা চলতে লাগল। এ পর্যন্ত টাকা পয়সা উপার্জনের কোন প্রকার চিন্তাই আমার ছিল না । আব্বা মাদরাসার শিক্ষক অপরদিকে মাদরাসা মার্কেটে আবার নিজস্ব লাইব্রেরীর ব্যবসা রয়েছে তবুও সাবালক সন্তানের ভরণপোষণ মা বাবাগণ এহসান হিসেবে করে থাকেন। তাই মনে মনে আক্ষেপ করতে লাগলাম, হে আল্লাহ! যদি আমার খরচের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারতাম, তাহলে কতই না ভাল হত? আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ কয়েক দিনের মধ্যেই আমি করাচি শহরস্ত একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ পেলাম। এরপর হতে আর কোনদিন টাকা-পয়সার জন্য মাতা-পিতাকে কষ্ট দিইনি। আমি তাদেরকে টাকার প্রয়াজন নেই বলে জানানো সত্তে¡ও তারা আমার জন্য টাকা পাঠাতেন।
যে সকল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন তার কয়েকটি
বহুমুখী প্রতিভা গুণে যারা দ্বীন ইসলামের ইলম অর্জন এর পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের গবেষণায় নবদিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়ছেন তাদের মধ্যে আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন অন্যতম। তিনি একজন শিক্ষক হিসাবে অর্জন করেছেন স্বকীয় খ্যাতি। জ্ঞান বিজ্ঞানের গবেষণা মূলক কর্মকান্ডে এবং নিত্যনতুন আবিষ্কারে চেতনা সদা উজ্জীবিত। এ আলেমেদ্বীন স্বকীয় মেধা অর্জিত জ্ঞানের সমন্বিত মাত্রায় সৃষ্টি করে নিয়ে ছিলেন নিজস্ব এ ভুবন। তার সমুদয় কার্যাদি ও গবেষণামূলক কাজ নিবেদিত করেছেন রাহে লিল্লাহ। তাঁর নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও দিন ও জাতির খেদমতে সর্বদা ছিলেন কর্মতৎপর। কর্মজীবন শুরু হয় মৌলভীবাজার দারুল উলুম মাদরাসা শিক্ষকতার মাধ্যমে। এরপর জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমামবাড়ী মাদরাসা হবিগঞ্জ। জামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদরাসা। জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মিরপুর ঢাকা। জামিআ দেওভোগ নারায়ণগঞ্জ। দারুল উলুম মিরপুর ৬ ঢাকা। জামিয়া নূরিয়া টঙ্গী গাজিপুর । জামিআ ইসলামিয়া ঢাকা। জামিয়া তেজগাঁও রেলস্টেশন ঢাকা। আল মারকাজুল ইসলামি মোহাম্মদপুর ঢাকা। তাহযীবুল ইসলাম মাদরাসা ঢাকা। জামিয়া মাদানিয়া কালিকা পাড়া মাদরাসা বানিয়াচংসহ তিনি বৃহত্তর সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন কওমি মাদরাসায় কৃতিত্বের সঙ্গে কোরআন-হাদিস, ফেকাহ, তাফসীর সকল বিষয় সুদীর্ঘ প্রায় ৪২বছর পর্যন্ত ইলমে দ্বীনের খেদমত করেছেন। জীবনের সর্বশেষ ১৬ বছর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর তালিম তরবিয়ত বিভাগের প্রধান দায়িত্বে ও জামিয়া মাদানিয়া দারুল ইফতা ওয়াল ইরশাদ এর প্রধান মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিযুক্ত ছিলেন । এছাড়াও তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মুফতি বোর্ডের সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। লেখালেখির জগতে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি, ও হিন্দি ভাষায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন বলেই তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করতে পেরেছেন। এরকম একজন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বর্তমান জামানায় পাওয়া বিরল তার শূন্যতা চিরদিন অপূরণীয় হয়ে থাকবে।
ফাতওয়া প্রদান
ছাত্রজীবন থেকেই হযরত মুফতী সাহেব রহ. ছিলেন আমল আখলাকে আদর্শ ব্যক্তি এবং তিনি হালাল-হারামের, জায়েজ- নাজায়েজ Ñএর ক্ষেত্রে গভীর অনুসন্ধান করে আমল করতেন । তেমনি ভাবে স্বীয় ওস্তাদও নির্বাচন করেন যুগের শীর্ষ প্রখ্যাত মুফতী আল্লামা রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ. তাকে অনুসরণ করে ধন্য হন। হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. এর সবচেয় সৌভাগ্য হচ্ছে তিনি জীবনে যত সব মাসআলার ক্ষেত্রে সমাধান দিয়েছেন। শরীয়তের ব্যতিক্রম কোন মাসআলা হয়নি । এ জন্য সাধারণ মানুষ আলেম-ওলামাগণ ছাডাও হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর অনেক ওস্তাদগণ পযর্ন্ত কেউ কোন জটিল মাসআলার সমাধানের জন্য হযরত মুফতী সাহেবের শরণাপন্ন হতেন। তা তিনি সহজেই সমাধান করে দিতেন। এছাড়াও ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে বড় অবদান হচ্ছে জীবনে যত ফতওয়া প্রদান করেছেন তার জন্য কেউ ভুল বা ফতুওয়া ভুল হয়েছে কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি সূক্ষ থেকে সূক্ষ জটিল মাসআলা খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতেন যেকেউ সহজেই বুঝে ফেলতো । আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তম বিনিময় দান করুন ।

ওসিয়ত নামা
হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজের জীবনকে খুব সাদাসিধে ভাবে চালাতেন। কখনো কোন কাজে অতিরিক্ত আনন্দ করতেন না। আবার কোন কষ্টে বা বিপদে আপদে সর্বদা সবর অবলম্বন করতেন। কারো ভুল হলে তা তিনি ক্ষমা সুন্দর ও দৃষ্টিতে দেখতেন। তাইতো তার প্রতি কারো অভিযোগ অনুযোগ নেই। তবুও ইন্তেকালের আগে তিনি নিজের লেখনি গ্রন্থ কাশফুলের প্রথম পৃষ্ঠায় আলাদাভাবে একটি ওসিয়ত নামা চিরকূট লিখে যান । সেই ওসিয়াত হচ্ছে ১/ আমার মৃত্যুর কারণে নওহা করতে সম্পূর্নরুপে নিষিদ্ধ আমি এতে ভারী অসন্তুষ্ট। ২/ আমার সম্বন্ধে শরীয়ত বিরোধী কোন কার্যকলাপ যেন কেউ না করে। ৩/ সর্বপ্রকার দাবি মাফ করতে অনুরোধ করছি, পরে আমার স্মরণ করে মাগফেরাতের জন্য দোয়া করো নতুবা পৃথিবীতে মহব্বতের দাবী করে ধোকাই খেলাম।
এক নজরে নসব নামা, পিতার দিকে
একদিল শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, দরবারী শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, আলাউদ্দিন (আলাই শাহ) রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আজিম উদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুন্সি হুসাইন আলী রহ., মাওলানা আব্দুল হালিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা হাফেজ মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
মাতার দিকে
নূর মোহাম্মদ তালুকদার, এনায়েত উল্লাহ, আব্দুস সামদ, ওসিয়ত উল্লাহ, আব্দুস সোবহান, জাহেরা খাতুন, আল্লামা হাফেজ মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
স্ত্রীর পক্ষে
শেখ জারু, শেখ সিফাত উল্লাহ তালুকদার, আব্দুস সাত্তার, মিম্বর আলী, শেখ ইসহাক আলী তালুকদার, মোসাম্মৎ তাহেরা বেগম, স্বামী আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ.

সন্তানাদিগণ
মোছাম্মাৎ ঝীনতা খাতুন, মোসাম্মাৎ জীবা খাতুন, আলেমা জুফরা খাতুন জীরক, ডাক্তার মুফতী শ্াহ জুলকারনাইন, আলেমা জুফা খাতুন, আলেমা জুলফা খাতুন, হাফেজ শাহ্ জুন্নুরাইন, মোহাম্মদ যুলকিফল।
১ম স্ত্রীর ইন্তেকালের পর
হযরত মুফতী সাহেব রহ. মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। কারণ এই সময় হযরতের ছেলেমেয়ে গুলোর বয়স ছিল খুবই অল্প। বড় মেয়ে জীবা খাতুনের বয়স ছিল প্রায় ১৫ বছর। তখন এই ছোট ছোট ভাই বোনের রান্না বান্না ও প্রাথমিক লেখাপড়ার দায়িত্ব হযরতের বড় মেয়েই পরিচালনা করতেন। হযরত এর ছোট ছেলে শাহ জুননুরাইনের বয়স ছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর। সময়ের এই ক্লান্তিলগ্নে হযরত মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি ২০০৩ ইং এর দিকে নবীগঞ্জ থানাধীন দত্তগ্রাম নিবাসী হাকিম আব্দুল মন্নান সাহেবের কন্যা রায়হানার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী জীবনের শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর এই দম্পতির সঙ্গে সংসার হয়। কিন্তু তার থেকে কোন সন্তান সন্ততি জন্ম হয় হযরত মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহির ইন্তেকালের কিছুদিন পর। স্ত্রী স্বেচ্ছায় নিজ পিতা মাতার আশ্রয় জীবন কাটাতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় হযরত মুফতী সন্তানাদিগন তাকে নিজেদের কাছে রাখতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহির পরিত্যক্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বন্টন হওয়ার পর হযরতের স্ত্রী প্রাপ্ত সম্পদ উভায় মুরুব্বীদের সম্মুখে গ্রহণ করেন। স্বেচ্ছায় জ্ঞানে নিজ পিত্রালয় চলে যাওয়ার অনুমতি চান। সৎ মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণে হযরত এর সন্তানাদিগণ অনুমতি প্রদান করেন। আল্লাহ হযরতের পরিবার-পরিজনকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। এবং উভয় জাহানের কামিয়াবী দান করুন আমীন।
রাজনীতি
হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি পারিবারিকভাবেই ছোটবেলা প্রাথমিক শিক্ষা শুরু থেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে জড়িত ছিলেন। তার বড় কারণ হলো ওস্তাদগণ তো সবাই জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। তিনি কোন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। বাকি সারা জীবন তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে প্রবেশ করেননি। এবং প্রকাশ্য সমর্থন ও দেননি। বরং সকল ইসলামী দলের ইসলামিক কল্যাণ কাজে আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন এবং নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত রেখেছিলেন।
তেল মবিল পেট্রোল ছাড়া মোটর সাইকেল আবিষ্কার
শাইখুল হাদিস আল্লামা হাফেজ মুফতী শিব্বির আহমদ রহ. তিনি যেমন ছিলেন ইলমে দ্বীনের খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব তেমনি ভাবে তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণা মূলক কর্মকান্ডে ও নিত্যনতুন আবিষ্কারে চেতনায় সদা উজ্জীবিত। তিনি স্বকীয় মেধা ও অর্জিত জ্ঞানের সমন্বিত মাত্রায় সৃষ্টি করে নিয়ছিলেন নিজস্ব এ ভুবন। তাইতো দেখা গেল হযরত মুফতী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মিরপুর ১ ঢাকা ১৯৮৪ ইংরেজিতে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীকে অবাক করে দিলেন। তেল, মোবিল, পেট্রোল, ডিজেলে এবং গ্যাস ছাড়া বাতাসের সাহায্যে চাবির মাধ্যমে মোটরসাইকেল তৈরি করেন। কিন্তু আফসোস করে বলতে হয়। এই মোটরসাইকেল দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমাতো। তার প্রশংসায় দেশ-বিদেশে মিডিয়াতে প্রচার হতে লাগলো। তবুও বাঙালির ভাগ্যে সেই আবিষ্কারের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি । তখনকার সরকারের পক্ষ থেকে তার এই আবিষ্কারের প্রশংসার পরিবর্তে দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। আর ভবিষ্যতেও যেন কোনো আবিষ্কার না করতে পারে এজন্য আমরা আজ এই আধুনিক প্রযুক্তি আবিষ্কার থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশ সচিবালয় বিদ্যুাৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়
বিগত ২৭/১১/১৯৮৬ ইংরেজিতে বাংলাদেশ সচিবালয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় অফিসে দেশ ও জাতির স্বার্থে গবেষণায় নিজের নব আবিষ্কারের বিকল্প জ্বালানির ষষ্ঠ সূত্রটি জমা দেন। যাই হোক ২০১০ ইংরেজির সময়টা কিন্তু অন্য রকম। এবার বাংলাদেশ সরকার পরিবর্তন হয়ে এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার দেশরতœ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা, তার সরকারি কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার কর্মকর্তা হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর নিকট বেফাকুল মাদারিস আরাবিয়া বাংলাদেশ অফিসে এসে সাক্ষাৎ করেন। তখন তারা হযরত মুফতী সাহেবের সঙ্গে অফিসে দীর্ঘ কৌশল বিনিময় হয়। এতে তারা এই কথা দাবি রাখেন আপনি পূর্বের নব আবিষ্কার আমাদেরকে এখন আবিষ্কার করে দেন। আপনি একজন আবিষ্কারক এই অনুসন্ধান আমরা পেয়েছি । আশাবাদী আপনি আমাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সহযোগিতায় থাকবেন। আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ সুন্দর উন্নত মানের দেশ গড়তে। এজন্য আপনার সঙ্গে আমাদের এই জরুরি সাক্ষাৎ। প্রয়োজনে আমরা সরকারী ভাবে এখন আর্থিক সহযোগিতায়ও থাকবো। তখন হযরত মুফতী সাহেব রহ. বলেন আলহামদুলিল্লাহ। আমি পূর্বেও কামনা করেছিলাম । কিন্তু আমি পাইনি, বরং পেয়েছিলাম তার বিপরীত হুমকি-ধমকি। সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা আজ এই আধুনিক আবিষ্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থ। বর্তমান সময় আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাকে যে আর্থিক স্বচ্ছলতা দান করেছেন । তার জন্য আপনাদের টাকা লাগবে না। আমার টাকা দিয়েই আগে আবিষ্কার করব। পরবর্তীতে আমি তা দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রচার-প্রসার করব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো এই নব আবিষ্কার কাজ শুরু করার সময় অল্প কিছুদিন পরই হযরত মুফতী সাহেব রহ. ষ্টোক রোগে আক্রান্তহন। এরপর বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে আর বাকি কাজটুকু করতে পারেননি। আমরা আজ এই মহান নব আবিষ্কার হতে বঞ্চিত । শুধু তাই নয় হযরত মুফতী সাহেব রহ. যখন বানিয়াচং কালিকাপাড়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন তখন একটি পেডেল স্পিড বোর্ড আবিষ্কার করেন এবং এটি বানিয়াচং কমলা রানীর দিঘিতে মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে পরীক্ষা স্বরূপ চালিয়ে সফল হয়েছিলেন। এভাবে হযরত মুফতী সাহেব রহ. জীবনের বহু ক্ষেত্রে শুধু নিজের জন্য নয়, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে লিপ্ত রাখেন। এমন একজন মহামনিষী বর্তমান সময় পাওয়া দুষ্কর।

আশ্চর্য ঘটনা
হযরত মুফতী শিব্বির আহমদ রহ. বলেন, একদা আমার এক বন্ধু তার জমিতে কাজরত ছিল। পক্ষান্তরে কোদালের সাহায্য ছাড়া কোন এক পার্শের মাটি সরাতে লাগলে। হঠাৎ করে এক সুবাষ অনুভূতি হতে লাগল। কিন্তু কোথা থেকে সেই সুবাস আসছিল তা আর তিনি ঠিক করতে পারলেন না। তিনি অবশ্যই চতুর ছিলেন তাই বুঝে ফেলেন যে, এই যে একটি ছিদ্র হতে সে সুবাস বইছে । ছিদ্রটি একটি কবর ভেদ করে চলে গেছে। ততক্ষণাতই সে ছিদ্রটি একেবারে বন্ধ করে দিলেন। যেন দ্বিতীয়বার কেউ অনুভব করতে না পারে। কিছুদিন পর আমি সেই সংবাদ শুনে তাঁকে স্থানটি নির্দেশ করার নিমিত্তে বাধ্য করলাম। ফলে আমরা তিনজন বন্ধু রাত্রিকালে কোদাল হাতে নিয়ে সেই কবরস্থানে উপস্থিত হলাম। অনেক কষ্টের পর সেই ছিদ্রটি আবার খুঁজে পেলাম। মাটি শুকলে বিষয়টি সত্যতা পাই।
সন্দেহ জিনিস পরিহার
আল্লামা হাফেজ মুফতী শিববীর আহমদ মাহবুর রহ. সব সময় সন্দেহ যুক্ত বস্তু পরিহার করতেন। হযরতকে প্রশ্ন করা হলো। আপনি যখন ছোট ছিলেন, অর্থাৎ যখন আপনি প্রাথমিক ছাত্র ছিলেন। তখনও কি কোন সন্দেহ বা নাজায়েয জিনিস গ্রহণ করেছিলেন? প্রশ্নের উত্তরে বলেন। আল্লাহর রহমতে নাজায়েয গ্রহণ করব দূরের কথা। যখন একটু বুঝমান হয়েছি মাধ্যমিক লেখা পড়া করি তখনই আমি সন্দেহ যুক্ত বস্তু হতে যথাযথ বিরত থেকেছি। এমনকি আমি যখন মাধ্যমিক পড়া-লেখায় ছিলাম, তখন যে সব কোরআন খতম তাসবিহ ইত্যাদি পড়েছি এবং এর বিনিময় জন সম্মুখের চাপে পড়ে যা নিয়ে ছিলাম। আমি পরবতীর্তে সে সব মালিকের নিকট সেই টাকার পরিমান টাকা গুলোকে যথাযথ ভাবে মালিকের নামে চিঠির খামে ফেরত দিয়েছি। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত জেনে শুনে কোন নাজায়েজ বস্তু বা সন্দেহযুক্ত জিনিস আল্লাহর রহমতে গ্রহণ করিনি। আর আমার পূর্ণ সম্পদের মধ্যে কোন প্রকার সন্দেহযুক্ত জিনিস আমি রাখিনি। এমন কি আমি আমার পরিবার সন্তানাদিকে কোন নাজায়েয দূরের কথা কোন সন্দেহযুক্ত খাবারও জীবনে খাওয়াইনি। এজন্য আমি আল্লাহর কাছে বলতে পারব যে, হে আল্লাহ! আমি জেনে শুনে নিজে ও পরিবার পরিজনকে নাজায়েয বা সন্দেহযুক্ত কোন জিনিস ব্যবহার বা আহার করাইনি। এর বিনিময়ে আমাকে আপনি জান্নাত দান করুন।
ইন্তেকাল ও দাফন
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড) এর তালীম তরবিয়্যাত বিভাগের প্রধান ইফতা বোর্ডের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, জামিয়া মাদানীয়া মান্ডা, সবুজবাগ ঢাকার প্রধান মুফতী, শীর্ষ আলেমে দ্বীন, প্রখ্যাত বুজুর্গ শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ মাওলানা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর (র.) গত ১৫ই অক্টোবর ২০১৫ ইং বুধবার দিবাগত রাত ২ টা ৩০ মিনিটের সময়, ঢাকাস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সিটিটিউট হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি …….রাজিউন) মৃত্যকালে তাঁর বয়স ছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়ে সহ অসংখ্য আতœীয়-স্বজন ও গুনাগ্রাহী রেখে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। হাসপাতালে যারা চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। তারা ছিলেন, হযরত মুফতী সাহেব (র.) এর জামিয়া মাদানীয়া মান্ডা মাদরাসার ইফতা বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকবৃন্দ। তারা বলেন, হযরত মুফতী সাহেব (রঃ) যখন মৃত্যু সন্নিকটে তখন তিনি নিজেই নিজের হাতের ঘড়ি, ব্যবহারিত লাগানো দাঁত খুলে তাদের কাছে দেন। অতঃপর তিনি হুইল চেয়ারে বসা অবস্থাতেই ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে থেকে খোদার প্রতি মনোনিবেশ হয়ে উপরের দিকে দুহাত তুলে দোয়া পড়তে পড়তে মাওলার ডাকে সাড়া দেন। অতঃপর, হযরতের মরদেহ জামিয়া মাদানীয়া মাদরাসায় আনা হয়। সেখানে হযরতের ছাত্র ও সাথী বৃন্দগণ জীবনের শেষ গোসল দিয়ে জানাযার জন্য প্রস্তুত করেন। এরপর হযরতের মরদেহ দেখার জন্য নিজ কর্মস্থল, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড) অফিসে নিয়ে আসা হয়। এর পর সেখান থেকে নিজের জন্মস্থান, হবিগঞ্জ-বানিয়াচং উপজেলার ঘাটুয়া গ্রামে বেলা ১ টা এসে পৌঁছলে, আতœীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য আলেম ওলামা অগনিত ভক্ত আনুসারীগণ এক নজর দেখার জন্য ভীড় জমান। এ সময় এলাকায় এক শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। হযরতের জানাযার পূর্ববর্তী সময় তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন। আলেম ওলামাগণ এতে বলেন মরহুম আল্লামা হাফেজ মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রহ. ছিলেন এ যুগের হযরত বায়জিদ বোস্তÍামী রহ.। বর্তমান যুগে এরকম একজন মহান মনিষীর ইনতেকালে শোকাহত দেশ ও জাতি। তার শূন্যতা চিরদিন অপূরণীয় হয়ে থাকবে। অতঃপর, বিকালে- ৪.৩০ মিনিটের সময় নিজ গ্রামের ঈদগাহের মাঠে হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর বড় সাহেবজাদা ডাঃ মুফতী শাহ জুলকার নাইন এর ইমামতিতে জানাযার নামাজ সম্পন্ন হয়। তারপর হযরত মুফতী সাহেব রহ. কে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চির দিনের জন্য শায়িত করা হয়।